মান্দার/পারিজাত
ইংরেজি নামঃ Erythrina variegata
মান্দার গাছের রক্ত রাঙ্গা
ফুল অনেক ফুল প্রেমিকের কাছেই অনেক প্রিয়।তবে বিলুপ্ত প্রায় মান্দার গাছের ফুল
অথবা এই গাছ অনেকের কাছেই অচেনা।এছাড়া কাঁটাওয়ালা
গাছ হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে।
মান্দার এর আদি নিবাস মালয়
ও শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় অঞ্চলে!উত্তরাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশসমূহ, ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার
উত্তরাঞ্চল, ভারত মহাসাগরীয়
দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী
পশ্চিমাঞ্চলীয়
এলাকা থেকে শুরু করে ফিজির পূর্বাংশেও মান্দার বা পারিজাতের দেখা মেলে।
উষ্ণমণ্ডলীয় এবং
নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় উভয় পরিবেশেই এ বৃক্ষটি জন্মে।
কাঁটাবিশিষ্ট
গাছ হিসেবে এটি ২৭ মি (৮৯ ফু) পর্যন্ত উঁচু
হতে পারে। এর শাখাগুলো ধূসর রঙের। পাতা পালকের ন্যায়
খুবই পাতলা এবং ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও
ত্রিভূজাকৃতিবিশিষ্ট প্রশস্ত হতে পারে। শীতের শুরুতে পাতাগুলো
ঝরে পড়ে এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এই গাছ পাতা শূন্য হয়।মে-জুন মাসে গাছে পুনরায় নতুন পাতা গজায়। পাতা ঝরে পড়ার পর ফুলের
আবির্ভাব ঘটে। গন্ধবিহীন ফুলগুলো গাঢ় লাল কিংবা উজ্জ্বল লোহিত
বর্ণের ১৫ সেন্টিমিটার লম্বাটে।উজ্জ্বল লাল বর্ণের কারনে
মান্দার ফুল মানুষের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয়।ফুল ফোটা শেষে গাছে ফল আসে।ফল প্রথম
অবস্থাতে সবুজ বর্ণের হলেও পাকা অবস্থায় কালচে রং ধারন করে ফলের ভিতরে বীজ থাকে বীজ ঘন বাদামী
কিংবা কালচে রঙের হয়।বীজদণ্ডটি ১৫ থেকে ৩০
সেন্টিমিটার লম্বা ও ২.৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত হয়।ফলগুলো কয়েক মাস পর্যন্ত গাছে
ঝুলে থাকতে পারে। প্রতিটি ফল থেকে ১০ থেকে ১২ টি বীজ পাওয়া যায়।
মান্দার গাছ ও ফলের বহুবিধ ভেষজ গুন রয়েছে।হিন্দু ধর্মের পুরাণে
মান্দার ফুলকে তাদের দেবী ইন্দিরার প্রতিক হিসেবে গননা করা হয় এ সম্পর্কিত কিছু
তথ্য/মিথ বা গল্প প্রচলিত রয়েছে।
এতে উল্লিখিত সমুদ্রমন্থনের কাহিনি অনেকেরই জানা
রয়েছে।
অমৃতের
সন্ধানে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড
হিসেবে ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে তুলে এনেছিলেন একের
পরে এক আশ্চর্য সব বস্তু। সেই মন্থনে
উদ্ভাসিত হয়েছিলেন লক্ষ্মী দেবী, ঐরাবত হস্তী, উচ্চৈশ্রবা অশ্ব, অপ্সরাকুল, কামধেনু, চন্দ্র ইত্যাদি
এবং
অবশ্যই হলাহল বিষ ও অমৃত। এ সব ছাড়াও সেই মন্থনে উঠে এসেছিল এক আশ্চর্য
বৃক্ষ,
যার
নাম মান্দার বা পারিজাত। পরবর্তী কালে স্বর্গের
বর্ণনায়
বার বার পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে মান্দার বা পারিজাতের নাম।
ইন্দ্রের নন্দন কাননে প্রধান গাছটিই হল মান্দার বা পারিজাত, এমন কথা হিন্দু
পুরাণে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে উল্লিখিত। ‘হরিবংশ পুরাণ’-এ উল্লিখিত রয়েছে, মান্দার বা পারিজাত একটি ‘কল্পতরু
এর
কাছে যা প্রার্থনা করা যায়, তা-ই নাকি পাওয়া
যায়। সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মান্দার/পারিজাত স্বর্গে থাকলেও মর্ত্যভূমে একটি মাত্র গাছ নাকি
রয়ে গিয়েছে।
পুরাণে যাই থাকুক আমাদের ফুল প্রেমীদের কাছে পারিজাত বা
মান্দার ভালবাসার রঙ্গে রঙ্গিন একটি ফুলই যাতে বিমোহিত হয় মন।পাখিদের কাছেও এই গাছ
ও ফুল ভালবাসার ভিত্তি।